আল্লাহর শেষ প্রতিনিধি পৃথিবীর এক মহান সত্য যার প্রতি কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে ইঙ্গিত করা হয়েছে এবং ওই সকল আয়াতের ব্যাখ্যায়ও বহু রেওয়ায়াত বর্ণিত হয়েছে নিম্নে তার কিছু আজ আমি হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী আপনাদের কাছে তুলে ধরলাম:যেমন সূরা আম্বিয়ার ১০৫ নং আয়াতে বলা হচ্ছে, وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُورِ مِن بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصَّالِحُونَ
নিশ্চয়ই আমরা তৌরাতের পর যাবুরে উল্লেখ করেছি যে , যোগ্যতা সম্পন্ন বান্দারা পৃথিবীর আমাদের উত্তরাধিকারী হবে। ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন: ‘ইমাম মাহদী (আ.) ও তাঁর সাহায্যকারীরা হচ্ছেন সেই যোগ্য বান্দা যারা পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবেন (তাফসীরে কুম্মী খণ্ড- ২ , পৃ.-৫২)।’
সূরা কাসাসের ৫ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে:﴿ وَنُرِيدُ أَن نَّمُنَّ عَلَى الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا فِي الْأَرْضِ وَ نَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَ نَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِينَ﴾ এবং আমরা ইচ্ছা করলাম যাদেরকে পৃথিবীর বুকে (বঞ্চিত) হীনবল করা হয়েছিল তাদেরকে নেতৃত্ব দান করতে এবং উত্তরাধিকারী করতে।
ইমাম আলী (আ.) বলেছেন: বঞ্চিত বা হীনবল বলতে রাসূল (সা.)-এর আহলে বাইতকে বোঝানো হয়েছে। অনেক প্রচেষ্টা ও কষ্টের পর আল্লাহ এই বংশের মাহদী (আ.)-কে প্রেরণ করবেন এবং তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন এবং শত্রুদেরকে কঠিন ভাবে লাঞ্চিত করবেন (গাইবাতে শেখ তুসী হাদীস ১৪৩ , পৃ.-১৮৪)।
সূরা হুদের ৮৬ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে: ﴿بَقِيَّةُ اللّهِ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ﴾ আল্লাহর গচ্ছিত সম্পদই তোমাদের জন্য যতেষ্ট যদি তোমরা মু ‘ মিন হয়ে থাক। ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন: ইমাম মাহদী (আ.) আবির্ভূত হওয়ার পর কা ‘ বা গৃহে হেলান দিয়ে প্রথমে উক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করবেন। অতঃপর বলবেন: انا بقية الله فی ارضه و خليفته و حجته عليکم
আমিই পৃথিবীর বুকে আল্লাহর গচ্ছিত সম্পদ , তোমাদের প্রতি তাঁর উত্তরাধিকারী এবং হুজ্জাত। অতঃপর যারা তাঁকে সালাম করবে তারা বলবে: السلام عليک يا بقية الله فی ارضه
আপনার প্রতি সালাম , হে পৃথিবীর বুকে আল্লাহ্র গচিছত সম্পদ (কামালুদ্ দ্বীন খণ্ড- ১ , বাব ৩২ , হাদীস ১৬ , পৃষ্ঠা ৬০৩)।
সূরা হাদীদের ১৭ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে:﴿اعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يُحْيِي الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ﴾
জেনে রাখ আল্লাহই ধরিত্রীকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন৷ আমি নির্দশনগুলি তোমাদের জন্য বিশদভাবে ব্যক্ত করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন: আল্লাহ তা ‘ আলা ইমাম মাহদী (আ.)-এর নিষ্ঠার মাধ্যমে পৃথিবীকে পূনর্জীবিত করবেন৷ কেননা অত্যাচারিদের অত্যাচারের মাধ্যমে পৃথিবী মৃত্যুবরণ করেছিল (গাইবাতে নোমানী পৃ.-৩২)।
হযরত ইমাম মাহদি (আঃ) এর পরিচিতি :
নাম ও বংশ :
উনার প্রকৃত নাম মুহাম্মদ। (আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৬০১)। উপনাম : আবু আব্দুল্লাহ / আবুল কাশেম। উপাধি : মাহদি (আঃ)।
হাদিসে এসেছে, মাহদি আমার বংশে ফাতেমা’র সূত্রধরে আগমন করবে। (আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৬০৩/৪২৮৪)।
হাদিসে আরো এসেছে “মাহদি আমার বংশে হবে। কোনো এক রজনীতে মহান স্রষ্টা তাঁকে ঐশ্বর্য দান করবেন ও সংশোধন করবেন।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, বিশৃঙ্খলা অধ্যায়; হাদিস নং ৪০৮৫, সনদ সহিহ)।
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আশ্চর্য হচ্ছি এ ভেবে যে, আমার উম্মতের মধ্য হতে একটি দল বায়তুল্লায় আশ্রয় নেয়া এক ব্যক্তিকে আক্রমণ করতে অগ্রসর হবে। যখন তারা মরুপ্রান্তর পাড়ি দেবে তখন তাদেরকে জমিনের ভেতর ধসিয়ে দেয়া হবে।” (সহিহ বুখারি, ব্যবসা অধ্যায়, বাজার পরিচ্ছেদ এবং সহিহ মুসলিম, হা/২৮৮২ ফেতনা অধ্যায়, তিরমিযী হা/১২৭৬) ।
এখানে বায়তুল্লায় আশ্রয় নেয়া এক ব্যক্তি বলে ইমাম মাহদি (আঃ)-কেই বুঝানো উদ্দেশ্য। কারণ তিনি কুরাইশী এবং কেয়ামত পূর্বমুহূর্ত আল্লাহ তায়ালার সম্মানিত খলিফা।
জন্ম ও জন্মভূমি :
তিনি স্বাভাবিকভাবে মানুষের মতই মাতাপিতার ওরসে জন্ম লাভ করবেন। তাঁর জন্মস্থল নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে কানজুল উম্মাল কিতাবের (হা/৩৯৬৭১) দুর্বল একটি রেওয়ায়েত দ্বারা বুঝায় যে, তাঁর জন্মস্থল হবে ‘মদিনা’।
তবে হযরত ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন “হে কূফাবাসী তোমরা ইমাম মাহদি’র আগমনে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান।” এতে এও বুঝা যায় যে, কূফা শহর তাঁর জন্মস্থল হতে পারে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হা/৩৩১২১ এবং ৩৮৭৯৮)। কিন্তু সহিহ রেওয়ায়েত দ্বারা এটি সুস্পষ্ট নয়। তাই মতভেদ হওয়া স্বাভাবিক।
ইমাম মাহদির বৈশিষ্ট্য :
তাঁর শারিরীক গঠন মধ্যম আকৃতির হবে। ললাট দীপ্তিময়, উজ্জ্বল, ডাগর চক্ষুবিশিষ্ট। সম্মুখের উজ্জ্বল দাঁতগুলো ফাঁকা। ঘন দাড়ি বিশিষ্ট। সাদা ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করবেন ইত্যাদি। তখন তাঁর বয়স থাকবে চল্লিশ। (তাবারানী ফিল-কাবীর, হা/৭৪৯৫; এর সনদ দুর্বল হলেও ভিন্ন হাদিস দ্বারা এসব সমর্থিত) ।
হাদিসে আরো এসেছে “মাহদি আমার বংশধর। তিনি উজ্জ্বল ললাটের ও বাঁকা নাসিকা বিশিষ্ট হবেন। পৃথিবীকে ন্যায় নীতি ও ইনসাফ দ্বারা ভরপুর করে দেবেন। তিনি সাত বছর শাসন করবেন।” (সুনানে আবু দাউদ : হা/৪২৮৫; এর সনদ সহিহ) ।
যুগে যুগে মাহদি দাবিদার ভন্ডদের আস্ফালন :
বিভিন্ন হাদিসে ইমাম মাহদি (আঃ) এর অবির্ভাবের সুসংবাদ থাকায় একশ্রেণীর অসাধু লোক নিজেদের “মাহদি” দাবি করে বসে। এদের এ লংকাকান্ড প্রায় প্রত্যেক যুগেই দেখা গেছে। কখনো কখনো সাম্রাজ্যবাদী পেশিশক্তিরাও এ ভন্ডদের ভন্ডামির পেছনে মদদ যুগিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেয়েছিল। ভারত উপমহাদেশীয় কাদিয়ানী ফেতনা এমনি একটি লজ্জাজনক ইতিহাস, যা বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী পেশিশক্তিকে বাদ দিয়ে কল্পনাও করা যায়না। সারা বিশ্ব আজ জেনে গেছে যে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (১৮৪০-১৯০৮ ইং) কাদের আশীর্বাদপুষ্ট এবং কাদের হাতে সৃষ্টি!
সেইকালের “কাদিয়ানী” আর আজ “আহমদিয়া মুসলিম জামাত”। শুধু শব্দের পরিবর্তন। মতবাদ আর উদ্দেশ্য আগের মতই। এটি মুসলিম জাতিকে বিভক্ত করার জন্য আরেক যন্ত্র। যার এক দিক দিয়ে ইনপুট হয়ে আরেক দিক দিয়ে আউটপুট হলেই বৃটিশ সরকারের নেক নজর আর লন্ডনে বড় বড় চাকুরী তার জন্য অভাব হয়না।
এ কাদিয়ানী জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মির্যা সাহেব সর্বপ্রথম ১৯০১ সালে নিজেকে নিজে নবী বলে দাবি তোলে ও প্রকাশ্য ঘোষণা দেয়। কিন্তু ইতিপূর্বে সে নিজেকে “মাহদি” বলেই দাবি করেছিল। ১৯০৮ সালে ভারতীয় প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন ছানাউল্লাহ অমৃতস্বরী (রহ) এর সাথে “মুবাহালায়” লিপ্ত হবার সপ্তাহখানিক পরেই কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। মলমুত্রে নিমজ্জিত হয়ে তার চরম অপমানকর মৃত্যুর পরবর্তী ইতিহাস সবার জানা।
শীয়া মতাবলম্বী ইমামিয়া সম্প্রদায়ের মতানুসারে ২৫৪ হিজরীতে তাদের ১১ তম ইমামের ধারা শেষ হয়ে যায়। ১২ তম ধারার সাথে ইমাম মাহদি (আ)-কে সম্পর্কযুক্ত করতে চায়, যা পুরোপুরিভাবে অবান্তর ও অগ্রহণযোগ্য। আমরা তাদের এ কথিত ইমামিয়া ধারাকে ইসলাম বহির্ভূত ও মনগড়া মতবাদ মনে করি। কারণ তাদের বিশ্বাস, ইমাম মাহদি (আ) তিনি ২৫৫ হিজরীতে ১৫ ই শাবান মাসে (বর্তমানে ১৪৩৬ হিজরী) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শীয়াদের মতানুসারে তাঁর পিতার নাম ছিল “হাসান আছকরী”। পাঁচ বছর বয়সে তাদের কথিত সেই ১২ তম ইমাম আত্মগোপন করেন। তিনি অচিরেই কিয়ামত পূর্বমুহূর্ত আত্মপ্রকাশ করবেন—এ হল শীয়া ইমামিয়া সম্প্রদায়ের কল্পিতনির্ভর মতবাদ। আমরা তাদের এসব ভিত্তিহীন গল্পগুজব বিশ্বাস করিনা।
কে হবেন ইমাম মাহদি?
“মাহদি” শব্দের অর্থ পথপ্রদর্শক। কেয়ামত পূর্বমুহূর্ত তিনি মুসলিম জাতির প্রাণ রক্ষা ও সহায়তা করবেন বিধায় তাকে মাহদি উপাধি প্রদান করা হয়েছে।
যুগে যুগে যেসব স্বার্থান্বেষী মহল নিজে বা অন্যকে “মাহদি” বানিয়ে দাঁড় করিয়ে তামাশার পথ বেচে নিয়েছিল, তাঁরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। তাই জনস্বাধারণের অবগতির জন্য বেসিক দু’চারটে কথা না বললেই নয়। মনে রাখবেন, হযরত ইমাম মাহদি (আ) তিনি কোনো নবী নন, ফেরেশতাও নন। তাঁর নামের শেষাংশে দোয়াস্বরূপ “আলাইহিস সালাম” যোগ করা হয়। যেমন হযরত খিজির, বিবি মারিয়াম, বিবি আছিয়া প্রমুখ মহামানবদের নামের শেষাংশে করা হয়। তিনি কুরাইশ বংশে হযরত ফাতেমা’র আওলাদ হতে আসবেন। হাদিসে এসেছে “আল্লাহ তায়ালা আমার বংশ হতে এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন। আমার নামেই তাঁর নাম, তাঁর পিতার নাম আমার পিতার নামেই থাকবে।”
(সহিহ আল-জামে, হা/৫০৭৩, মুসনাদে আহমদ ৩/২৬-২৭, তিরমিযী, হা/২২৩২)।
ইমাম মাহদি (আঃ) তিনি বায়তুল্লাহ শরিফেই আত্মপ্রকাশ করবেন। দাজ্জাল আর হযরত মসীহে ঈসা এবং প্রতিশ্রুত ইমাম হযরত মাহদি সবার সময়কাল একই হবে। প্রতিশ্রুত ইমাম হযরত মাহদি’র জীবদ্দশাতেই বিশ্বে ইসলামী স্টেট প্রতিষ্ঠা হবে, তিনি ৭/৮/৯ বছর খেলাফত করবেন অতপর স্বাভাবিকভাবে ইন্তেকাল করবেন।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে আরও বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘আমি তোমাদেরকে মাহদীর আগমণ সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছি। মানুষেরা যখন মতবিরোধে লিপ্ত হবে তখন তিনি প্রেরিত হবেন। পৃথিবী হতে জুলুম-নির্যাতন দূর করে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। আসমান-যমীনের সকল অধিবাসী তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন’’। (মুসনাদে আহমাদ। ইমাম হায়ছামী বলেনঃ হাদীছের বর্ণনাকারীগন নির্ভরযোগ্য। মাজমাউ য্ যাওয়ায়েদ ৭/৩১৩-৩১৪)
উম্মে সালামা (রাঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘কা’বা ঘরের পাশে একজন লোক আশ্রয় নিবে। তাঁর বিরুদ্ধে একদল সৈনিক প্রেরণ করা হবে। সৈন্যরা যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন যমিন তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে। উম্মে সালামা বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম অপছন্দ সত্ত্বেও যারা তাদের সাথে যাবে তাদের অবস্থা কি হবে? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তাকে সহ যমিন ধসে যাবে। তবে কিয়ামতের দিন সে আপন নিয়তের উপরে পুনরুত্থিত হবে’’। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)
সুনানে আবু দাউদ শরীফের ভাষ্যকার আল্লামা শামছুল হক আযীমাবাদী (রঃ) বলেনঃ ‘‘সর্ব যুগের সকল মুসলমানদের মাঝে একথা অতি প্রসিদ্ধ যে, আখেরী যামানায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বংশধর হতে একজন সৎলোকের আগমণ ঘটবে। তিনি এই দ্বীনকে শক্তিশালী করবেন। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। মুসলমানগণ তাঁর অনুসরণ করবে। সমস্ত ইসলামী রাজ্যের উপর তাঁর আধিপত্য বিস্তার হবে। তাঁর নাম হবে মাহদী। তাঁর আগমণের পরেই সহীহ হাদীছে বর্ণিত কিয়ামতের অন্যান্য বড় আলামতগুলো প্রকাশিত হবে। তাঁর যামানাতেই ঈসা (আঃ) আগমণ করবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। এ ব্যাপারে মাহদীও তাঁকে সহযোগিতা করবেন।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম, ইমাম মাহদীর আগমণে বিশ্বাস স্থাপন করা ওয়াজিব। কারণ তাঁর আগমণের ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। মাকামে ইবরাহীম এবং রুকনে ইয়ামানীর মধ্যবর্তী স্থানে মুসলমানগণ তাঁর হাতে বায়আত করবে। তাঁকে হত্যা করার জন্য সিরিয়া থেকে একদল সৈন্য প্রেরণ করা হবে। সৈন্যদলটি যখন মক্কার পথে ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন ভূমিধসে সকল সৈন্য হালাক হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা ইমাম মাহদীকে এভাবে তাঁর শত্রুদের হাত থেকে হেফাযত করবেন। তিনি মুসলমানদের খলীফা হয়ে ইসলামের মাধ্যমে বিচার-ফয়সালা করবেন। তাঁর যামানায় মুসলমানদের মাঝে চরম সুখণ্ডশান্তি ও নেয়া’মত বিরাজ করবে। অতঃপর তিনি দামেস্কের মসজিদে ফজরের নামাযের সময় ঈসা (আঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করবেন। প্রথমে তিনি ঈসা (আঃ) কে নামাযের ইমামতি করার অনুরোধ জানাবেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করলে স্বয়ং ইমাম মাহদী ইমামতি করবেন। ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) ইমাম মাহদীর পিছনে মুক্তাদী হয়ে নামায আদায় করবেন। অতঃপর তিনি ঈসা (আঃ) এর সাথে যোগ দিয়ে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বের হবেন এবং দাজ্জাল হত্যার কাজে ঈসা (আঃ) কে সহায়তা করবেন। তারপর তিনি সাত বছর মতান্তরে নয় বছর পৃথিবীতে বসবাস করে মৃত্যু বরণ করবেন। মুসলমানগণ তাঁর জানাযা নামায পড়বে।
উপরের সকল আলোচনা থেকে এটাতো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে ইমাম মাহাদী আসবেন, এবং তার আসাকে উপলক্ষ করে বেশ কিছু ঘটনা ঘটবে যার কিছু ঘটনা ঘটেও গিয়েছে। এছাড়াও তিনি আসার পূর্বে অনেকেই নিজেকে ইমাম মাহদী হিসেবে মিথ্যে দাবি করবে। তার মানে এই নয় যে তিনি এই মাসে বা সামনের মাসে বা সামনের বছর বা তার পরের বছর এসে পড়বেন। এটা নিশ্চিত করে এক আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কেউ বলতে পারবেন না বা জানেন না। অতএব সোশ্যাল মিডিয়া অথবা অনলাইনে যারা দিনক্ষণ নির্ধারণ করে ইমাম মাহাদীর আসার বিষয়ে প্রচারনা চালাচ্ছে তারা মূলত তাদের নির্দিষ্ট কোন স্বার্থ হাসিল করার জন্য এটি করছে। অথবা ইসলামের শত্রুরা এসব ছড়িয়ে দিয়ে আপনার ঈমানকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে প্রকৃত ইসলামের ছায়ায় এবং সত্যের পথে জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন, সকলকে ঈমান ও হেদায়েতের উপর অবিচল রাখুন এবং ঈমান বিনষ্টকারী সকল প্রকার ষড়যন্ত্র থেকে হেফাযত করুন। আমিন।
লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও কলামিস্ট।
খুলনা গেজেট/এনএম